গল্পঃ পাপের শিকল
- শময়িতা দিয়া
- May 10, 2023
- 6 min read

বাসায় কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো তিন্নি৷ আমি রীতিমতো একটা ধাক্কা খেলাম। মাএ এই মাএ ৩ ঘন্টা আগে তিন্নিকে আমি আর নুসরাত মিলে খুন করে এলাম। কিন্তু তিন্নি বেঁচে আছে?? এটা অসম্ভব । তিন্নি এক মুচকি হাসি দিয়ে বলল - জাওয়াদ খুব টেনশনে আছো বলে মনে হলো। কি ভাবছো??? আজকে তোমার প্রিয় খাবার রেধেছি খেতে এসো। জাওয়াদ ঘামছে। তিন্নি মরে নি!! তাহলে সে কাকে মেরে এলো!!! এসব কি হচ্ছে । তিন্নি জাওয়াদ কে ফ্রেস হয়ে খেতে আসতে বলল। জাওয়াদ ফ্রেস হয়ে খেতে বসেছে। কিন্তু খাবার গলা দিয়ে নামছে না। শুধু ভাবছে কিভাবে তিন্নি বেচে গেলো?? এত টেনশন কিসের জাওয়াদ!!! - আচ্ছা লিজা কোথায়?? - মারা গেছে। - মানে??? আমার বোন কই? -তুমিই ৩ ঘন্টা আগে তাকে মেরে এসেছো।ভুলে গেছো এরই মাঝে। -তিন্নি মজা করো না। বলো আমার বোন কোথায়? - আমি সত্যি বলছি। তুমি আমাকে মারতে চাইবে ভাবিও নি। তোমার এই নোংরা খেলায় আমি তোমাকেই ফাসিয়েছি। আমি ঐ ফ্ল্যাটে যাই নি। লিজা কে পাঠিয়েছি। আর ঐ রুমে লিজাই শুয়ে ঘুমাচ্ছিল। তুমি আর তোমার বান্ধবী নুসরাত মিলে লিজাকেই মেরেছো। জাওয়াদ কাঁদতে থাকে । এ দুনিয়ায় তার বাবা মা বেচে নেই। শুধু আদরের ছোট বোনটাই ছিল। তাকে সে নিজের হাতে খুন করেছে!!! তার তো মরে যাওয়া উচিত। জাওয়াদ কাঁদতে থাকে। আর তিন্নি কে বলতে থাকে, -এটা তুমি কেনো করলে??? - আমি কি করেছি নিজেই নিজের বোনকে মেরেছো। যেই নুসরাতের জন্য আমাকে মারতে চেয়েছিলে, সেই নুসরাত তুর্য কে ভালোবাসে। তোমাকে না। - তুর্য!!! লিজার স্বামীকে নুসরাত চিনে কিভাবে? - মি.জাওয়াদ নুসরাত তোমার সাথে বড় খেলাটা খেলেছে। এখন তুর্য ও নুসরাত এর মাঝে তোমার বোন নেই। তাকে তুমিই মেরে এসেছো। এ খেলায় তুমি হেরেছো জাওয়াদ। - না তিন্নি। আমাকে মাফ করে দাও। তিন্নি আমার বোন! না আমি ভাই হয়ে এ কাজ করতে পারি না৷ আমি কাউকে মারি নি। -আমার কিছুই করার নেই জাওয়াদ। পুলিশ কে খবর দিয়ে দিয়েছি। চলে আসবে এখন ই। তিন্নি কথাটা বলতেই কলিং বেল বেজে উঠলো...তিন্নি দরজা খুলে দিতেই পুলিশ অফিসার বলে উঠলো..... - এটা মি. জাওয়াদের বাসা?? - জ্বী। - আপনি উনার কে হন? - আমি উনার ওয়াইফ। - আপনি আমাদের খবর দিয়েছেন? - হুম। আসুন উনি ভেতরেই আছে। পুলিশ জাওয়াদ কে ধরে নিয়ে যায়। তিন্নি দূর থেকে তার চলে যাওয়া দেখে। এক অন্যরকম প্রশান্তি তিন্নির মুখে। হঠাৎ তিন্নির ফোন বেজে ওঠে, তিন্নির হাসির মাএা বেড়ে যায়। নুসরাত ফোন দিয়েছে....... - হ্যালো তিন্নি!! ও দিকের কি খবর?? - খবর ভালো নুসু। জাওয়াদ কে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো মাএ। তুর্য কই?? কাল আয় মিট করি?? - আচ্ছা আয়। তিন্নি, তুর্য, নুসরাত তিন জন বন্ধু। অনেক আগে থেকেই তাদের পরিচয়। তারা প্ল্যান করে জাওয়াদ কে দিয়ে তার বোনকে মারে। কারন তিন্নির বাবাকে জাওয়াদ মেরেফেলেছিল। জাওয়াদ তিন্নি কে চিনতো না। রাজনৈতিক ব্যাপারে তিন্নির বাবা অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ায় তিন্নির বাবাকে খুন করে কয়েকজন মিলে। সেখানে জাওয়াদ ও ছিল। আজ তিন্নির বাবার খুনির শাস্তি হলো। তিন্নি এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বসে রইলো বারান্দায়। পরদিন তিন্নি, তুর্য, নুসরাত একই সাথে আড্ডায় মেতে উঠে। তিন্নি তার বাসায় তুর্য ও নুসরাত কে দাওয়াত দিয়ে চলে আসে। এ দিকে নুসরাত আর তুর্য র মাঝে এখন কেউ নেই। তারা খুব তাড়াতাড়ি ই বিয়ে করবে বলে একে অপরের সাথে আলোচনা করে। বিকেলে তুর্য ও নুসরাত মিলে তিন্নির বাসায় যায়। তারা খাবার টেবিলে খেতে থাকে। হঠাৎ ই তুর্যর খুব অসস্তি লাগতে থাকে। তিন্নি ও নুসরাত নিজেদের পৈশাচিক হাসি দিতে থাকে। তুর্য বলে উঠে - তিন্নি গলা জ্বলছে। কি রেধেছিস এটা?? আমি আর পারছি না। পানি দে আমাকে। তুর্য মাটিতে পরে যায়। নুসরাত তার কাছে গ্লাস নিয়ে পানি না দিয়ে তার মুখে পানি ছুড়ে মারে। নুসরাত তুর্যর মুখ চেপে ধরে বলতে থাকে -মনে পরে তুর্য?? আমার বোনকেও এভাবেই তুই পানি খেতে দিস নি??? - কি বলছিস কি নুসরাত!!! - মনে পরে না তোর??? ঐ দিন ঝড়ের রাতে আমার বাসায় গিয়েছিলি তুই। আমি আর আমার মা বাহিরে আটকা পরেছিলাম। রুমে একা পেয়ে আমার বোনটাকে পিশাচের মতো গিলেছিস। মেরেও ফেলেছিস। কি ক্ষতি করেছিল ও তোর?? ঐ দিন ওর মুখে এভাবেই পানি মেরেছিলি। মনে পড়ে?? আমার বোনটা ছোট ছিল ওর খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল কিন্তু তুই!! আমার বোনটার শরীর ক্ষত বিক্ষত করেছিস। - তুই তাহলে জানতি সব!!! আমাকে মাফ করে দে। প্লিজ পানিটা দে.... - না। ঐ দিন আমার বোনটাও পানি পায় নি। তুই ওকে ঐ দিন মেরে চলে এলেও খুনি তুই প্রমান রেখে গেছিস। মনে পরে তোর ফোনটা আমার বাসায় রেখেই চলে গেছিলি???? আমি সবটা জানতাম কিন্তু তোকে তিলে তিলে মারবো বলেই আমি বেঁচে আছি। ভালোবাসার এ নাটক আমি করে এসেছি এতদিন। কিভাবে পারলি ঘরে লিজার মতো একটা বউ রেখে আমার বোনকে!!! আমার এতদিনের সাধনা আজ পূরন হবে। বিষক্রিয়ায় মারা যায় তুর্য।তিন্নি বলতে থাকে। তুর্যর লাশ কই, কিভাবে কি করবি। নুসরাত বলে উঠে -আমি একজন কে ডেকেছি। উনি আসছে। সব লাশের ব্যবসা উনি করবে। - আচ্ছা, একটু তাড়াতাড়ি । কেউ টের পেলে জেল হয়ে যাবে। - কেউ টের পাবে না তিন্নি। বলতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। তিন্নি দরজা খুলে অবাক হয়ে গেলো। এ তো সেই পুলিশ অফিসার, যে যাওয়াদ কে ধরে নিয়ে গেছে। তাহলে কি সে সব জেনে গেছে? পেছন থেকে নুসরাত বলে উঠে - আরে অফিসার সাহেব যে, আসুন আসুন ভেতরে আসুন। তিন্নি বলে উঠে,,,,, - তুই উনাকে চিনিস? - হ্যা। আর তিন্নি তুই কি বোকা, জাওয়াদ এর বোনের মৃত্যু র পেছনে তো আমার নামও উঠে আসতো। ওখানে তো আমিও উপস্থিত ছিলাম। তিন্নি ভেবে চিন্তে পুলিশ ডাকা উচিত ছিল তোর। তুই পুলিশ ডেকেই আমার কাজটা আরো জটিল করে দিয়েছিস। তাই তো আমাকে তোর ডাকা সেই পুলিশ অফিসারের সাথে ভাব জমাতে হলো। আপাতত জাওয়াদের বোন লিজার মৃত্যুর পেছনে আমার নামটা নেই। উনিই আমাকে সাহায্য করেছে। তিন্নি তুই এত চালাকি না করলেও পারতি। - বিশ্বাস কর। আমি নিজের বাবার খুনিকে শাস্তি দিতে এতই তৎপর ছিলাম। বুঝে উঠিনি কি হবে না হবে। - ঠিকাছে আয়। এখন তুর্যর লাশটা গাড়িতে তুলতে হবে উনার। - আয়। পুলিশ অফিসার, তিন্নি, নুসরাত এক লাশ নিয়ে পাড়ি দিলো গহীন বনের দিকে। এতটা জঙ্গল দেখে তিন্নি ভয় পেয়ে যায়। নুসরাত ও পুলিশ অফিসার হাসতে থাকে। নুসরাত তিন্নি কে বলে - ভয় কিসের তিন্নি। আমি তোর বান্ধবী না?? - ঠিকাছে কিন্তু এমন নির্জন যায়গা। আমার খুব ভয় লাগে। - ভয়ের কিছু নেই৷ নাম গাড়ি থেকে। এখানেই লাশটাকে ফেলে দিবো। - আচ্ছা । লাশের কবর খোড়া হচ্ছে । তিনজন মিলে অনেক কস্টে গর্তে তুর্যর লাশটা ফেলে দেয়,।মাটিচাপা দিবে এই সময়ই, নুসরাত আর পুলিশ অফিসার মিলে তিন্নি কে বেধে ফেলে। এবং তাকেও তুর্যর লাশের গর্তে ফেলে দেয়। তিন্নি চিল্লাতে থাকে আর বলতে থাকে - আমাকে এমন করছিস কেনো?? এ গর্তে আমাকে ফেলে দিলি কেনো। আমার হাত পা খুলে দে। আমি তো তোর কোনো ক্ষতি করি নি। নুসরাত বলে উঠে - স্যরি তিন্নি। আমি আমার খুনের স্বাক্ষী হিসেবে তোকে রাখতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিস। তোকে মরতেই হবে। - প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে। আমি কাউকে কিছু বলবো না। আমি বাচতে চাই। - হা হা হা। আমি কোনো প্রমান রাখি না৷ কথাটা বলেই নুসরাত ও পুলিশ অফিসার মিলে তিন্নি কে তুর্যর লাশের সাথে জীবন্ত কবর দিয়ে দেয়। এরপর নুসরাত আর পুলিশ অফিসার গাড়িতে উঠে। নুসরাত বলে - আমরা কাল দেখা করতে পারি? আপনার পেমেন্ট টা কালই করে দিবো। - ওকে ম্যাম। কোথায় আসবো বলেন। - এখানেই দেখা করি। তবে আমি চাই না গাড়ি টা নিয়ে আসেন। আপনার ডিপার্টমেন্ট তাহলে সন্দেহ করতে পারে। - এটা ঠিক বলেছেন । কাল তাহলে এখানেই দেখা হচ্ছে । - ঠিকাছে। ........................ পরদিন নুসরাত পুলিশ অফিসার কে টাকা টা দিয়েই। তাকে বিদায় করে দেয়। নুসরাত একা হাটছে। আজ সে এতগুলো খুন করেও মনে কোনো দ্বিধা নেই, খারাপ লাগা নেই।রাতে বাসায় ফিরে খবরে নিউজ দেখতে পায় " সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ অফিসার এর মৃত্যু" নুসরাত মুচকি হাসে। সে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায়। সে আয়নার ভিতর তারই মতো কাউকে দেখে। মেয়েটা নুসরাত এর মতোই নুসরাত কে বলে উঠে মেয়েটা - পুলিশকে কি করে মারলে?? - আমি নুসরাত কোনো প্রমান রাখি না। পুলিশকে গাড়ি চাপা দিতে লোক ভাড়া করেছিলাম৷ গহীন রাস্তায় সিসিটিভি নেই। - কে বললো নুসরাত তুই প্রমান রাখিস না। গাড়ির ড্রাইভার তো প্রমান। সে যদি ধরা পড়ে?? এত বড় পুলিশ অফিসার এর মৃত্যু। নুসরাত তোর ভয় হয় না??? - কিসের ভয়!!! ঐ গাড়ির ড্রাইভার বেশ সৎগিরি দেখাচ্ছিল। সে কাজের আগে টাকা নিবে না বলে। আমিও মেনে নেই। পুলিশ কে গাড়ি চাপা দেওয়ার পর৷ টাকা দেওয়ার আগে ওকে ২০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলি চা আনতে। বোকাটা চা আনতে গেলেই ওর গাড়ির ব্রেক টা কেটে দেই। টাকা দিয়ে আমি গাড়ি থেকে নেমে যাই। গাড়ির ব্রেক কন্ট্রোল না করতে পেরে ড্রাইভার ও এক্সিডেন্ট এ মারা যায় । আমি তো এক ঢিলে ২ পাখি মেরেছি। আমি নুসরাত কোনো প্রমান রাখি না। - এতগুল মানুষকে মারলি?? তাই বলে?? - তাতে কি। ওরা পাপ করেছে। অবৈধ কাজে সহযোগিতা করেছে। ওদের বাচার অধিকার নেই। - তুইও তো তাহলে অপরাধী!!! তোরও তো বাঁচার অধিকার নেই। - কে বললো আমি বেঁচে থাকবো???? বলেই নুসরাত এক পৈশাচিক হাসি দিতে থাকে আর বলতে থাকে - পাপের মূল্য সবাইকে দিতে হয়। হা হা হা তার হাতে শেষ দেখা গিয়েছিল এক বোতল!!!!! জানা নেই ওটা কিসের বোতল হয়তো বিষের নয়তো ঘুমের ঔষধ এর৷।।।।।।। সমাপ্ত।
AUTHOR
শবনম মোস্তারিন Gazipur government Mohila College. Class :12
Comments