top of page

গল্পঃ ইচ্ছেঘুড়ি

  • Writer: শময়িতা দিয়া
    শময়িতা দিয়া
  • May 10, 2023
  • 2 min read

আকাশ নীলিমায় এক অদ্ভুত খেলা,এক পশলা বৃষ্টি শেষে কিছুটা রোদের হাতছানি। বড়ই বিচিত্র এক জগৎ। আকাশে চলে রঙের খেলা। রং বেরঙের মেঘ ভেসে চলে মেঘমালায়। বৃষ্টিস্নাত এই সুন্দর পরিবেশে আরিয়ান বিকেলে বের হয়েছে।বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় সে পথ চলছে আনমনে, কিছুটা উদ্দেশ্যহীন ভাবে। যদিও সে প্রত্যেকদিন বিকেলবেলা হাঁটতে বের হয়। আজকেও তাই কিন্তু এত সুন্দর পরিবেশ তাকে উদ্দেশ্যহীন এক পথিক বানিয়ে দিয়েছে। রাস্তার ধারে ছোট্ট একটি জায়গায় ৮/৯ বছর বয়সি এক ছেলে শূন্য থালা নিয়ে বসে আছে। আরিয়ান দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললো, "এই ছেলে, তোর নাম কি?" "ইচ্ছে", ছেলেটি অন্যদিকে তাকিয়ে বলল। ''ইচ্ছে!!! এটা আবার কেমন নাম?" "ঠিক ধরেছেন৷ এটা আমার বানানো নাম।" "নাম বানিয়ে রেখেছিস কেনো?" "কি করবো বলেন? মা- বাবা মরা ছোট ছেলে আমি। তার উপর আরো ছোট এক ভাইকে খাওয়াতে হয়।অনেক স্বপ্ন দেখি, অনেক সাধ জাগে মনে। এইজন্য আমার নাম ইচ্ছে"। "তুই পড়াশোনা করিস না?" একটু অবাক হয়ে ছেলেটি বললো, "পড়াশোনা! পেটে ভাত জোটে না, পড়াশোনা করব কিভাবে?" আরিয়ান খুব কষ্ট পেলো ছেলেটির কথা শুনে। সে বললো, "পাশে যে শুয়ে আছে সে কি তোর ভাই? " "হ্যাঁ, ও আমার ছোট ভাই রুপক। বয়স বছর পাঁচেক।" কিছুটা ব্যথিত হয়ে আরিয়ান বললো,"তোরা কি রাস্তায় থাকিস? এখানেই ঘুমাস? কষ্ট হয় না তোদের? " "কষ্ট! হয় বটে। গরিবদের দুঃখ-কষ্ট থাকতে নেই। " তাদের কথাবার্তায় রূপক ঘুম থেকে কোথায় গেল। আধভাঙ্গা ঘুম গলায় বললো, "কার সাথে কথা বলো ভাইয়া?" "একজন বড়লোকের ছেলের সাথে।" ছেলেটি বললো। "উনি কি আমাদের টাকা দিতে এসেছে?"রূপক বললো। "না, রে। ওনারা আমাদের মত গরীবদের কিছু দেয় না।" আরিয়ান কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে বললো, "তোদের অনেক কষ্ট তাই না রূপক?" "হ্যাঁ, অনেক। ভাইয়া ভিক্ষা করে, মানুষের কাছে কাজ করে যা পায় তাই দিয়ে একটু খাবার তুলে দেয় আমার মুখে।" "তোরা কি সব সময় এখানেই থাকিস?" "কই আর যাব বলেন...." "তোরা একটু দাঁড়া এখানে, আমি আসছি।" এই বলে আরিয়ান দৌড়ে চলে গেলো তার বন্ধু রুশানের বাসায়। এই রুশান, দরজা খোল। এক নিঃশ্বাসে আরিয়ান বলে ফেললো। "কি হয়েছে? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?" রুশান প্রশ্ন করলো। "একজনকে সাহায্য করতে হবে। তোর কাছে যত টাকা আছে,সেটা নে। বাকিদের ফোন করে বলে দে কিছু টাকা নিয়ে রাস্তার মোড়ে আসতে। " "ওকে, আমি বলে দিচ্ছি। সবাই আসছে। " কিছুক্ষণের মধ্যে আরিয়ানের বাকি বন্ধুরা চলে আসলো। সকলেই টাকা এনেছে। বাবলু আরিয়ানকে জিজ্ঞাসা করলো, "এই টাকা দিয়ে কি হবে? " "আগে চল আমার সাথে,গেলেই বুঝতে পারবি। " সকলে আরিয়ানের সাথে গেলো,,,,,,, আরিয়ান রূপকের মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো, "এই নে টাকা। আজ থেকে তোদের কষ্টের দিন শেষ। " রুশান বললো, "তুই এখন থেকে স্কুলে যাবি রে, রূপক। " রূপকের ভাই বললো, "কিন্তু কিভাবে স্কুল যাবে রূপক? আমি তো পেটের ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খেয়ে যাই।" "তাহলে আমার স্কুলে যাওয়া হবে না ভাইয়া? " কথাটা বলেই রূপক মাথা নিচু করে ফেললো। "কে বলেছে স্কুলে যাওয়া হবে না?" আরিয়ান বললো," আমরা বন্ধুরা মিলে একটি স্কুল চালাই, সেখানে পড়তে কোন টাকা লাগে না। " "ইয়ে, কি মজা! আমি স্কুলে যাব।" বাবলু ইচ্ছে কে বললো," তুই কিছু ফুল নিয়ে স্কুলের সামনে ফেরি করবি, আর অন্য সময় আমাদের কাছে পড়বি।" "আমাদের সব কষ্ট শেষ হয়ে গেল রে ভাই ",ইচ্ছে রূপককে বললো। "এবার তো তোর ভালো নামটা বল", আরিয়ান বললো। "আমার ভালো নাম হচ্ছে ইশরাক হাসান "। রুশান হেসে বললো, "আমরা তোকে ইচ্ছে বলেই ডাকবো। " কষ্টকর এক জীবন থেকে মুক্তির বাতাস যেন নতুন করে বাঁচতে শেখায়। নতুন এক আগামীর প্রত্যাশায় জীবন বয়ে চলে নিজ উদ্যমে।


AUTHOR

Nushrat Jahan Mohima honours 2nd year Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman Maritime University,Bangladesh

Comments


bottom of page